নরসিংদীতে দূর্ঘটনায় নিহত দরিদ্র এক পরিবারের জরিমানার টাকা আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে সদর উপজেলা পাইকারচর ইউপি চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে। এই টাকা লেনদেনের ভিডিও ফুটেজ এখন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ঘুরছে।এক বছরেও ক্ষতিপূরণের টাকা না দেয়া এলাকায় বইছে নিন্দার ঝড়। ক্ষতিপূরণের টাকা দিতে গিয়ে ঋণের বোঝা বইছে ট্রাক্টর চালক। তবে টাকা লেনদেনের বিষয়টি অস্বীকার করেছেন ইউপি চেয়ারম্যান ও পাইকারচর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি আবুল হাসেম।
স্থানীয় বিভিন্ন সূত্র জানায়, এক বছর আগে পাইকারচর ইউনিয়ন পরিষদের কামারচর এলাকার বেনু মিয়ার ছেলে সুমন মিয়া (২০) সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হয়। নিহত সুমনের বাবাকে ক্ষতিপূরণ হিসেবে গাড়ির মালিক পাঁচদোনা এলাকার সোনা মিয়া চেয়ারম্যানের কাছে এক লাখ টাকা প্রদান করেন।
চেয়ারম্যানের নির্দেশে ওনার ব্যক্তিগত প্রতিষ্ঠানের ম্যানেজার এমএ হোসেন সেই টাকা বুঝে নেন। কিন্তু এক বছর পেরিয়ে গেলেও চেয়ারম্যান নিহতের পরিবারকে কোনো টাকা প্রদান করেনি। এ নিয়ে স্থানীয় বাসিন্দাদের মধ্যে সমালোচনার ঝড় সৃষ্টি হয়েছে।
এদিকে ক্ষতিপূরণ কৃত টাকা প্রদানকারী ও গাড়ির মালিক সোনা মিয়া অভিযোগ করেন, যে ছেলেটি মারা গেছে, সে আমার গাড়িচাপায় মরেনি। দুর্ঘটনা ঘটেছিল একটি লেগুনার সঙ্গে। লেগুনাটি পালিয়ে গেলে স্থানীয়রা সন্দেহ করে পিছনের মাটি কাটার (ট্রলি) ট্রাক্টরটি আটক করে।
তিনি বলেন, আমি নিহত সুমনের বাবা বেনু মিয়ার সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি আমাকে বলেন- আমার কোনো টাকা পয়সা দাবি নাই। আমার ছেলে মারা গেছে। টাকা পয়সা দিয়ে কী হবে?
সোনা মিয়া বলেন, ঘটনার দুই দিন পর চেয়ারম্যান আমাকে ডেকে নিয়ে বলে, দেড় লক্ষ টাকা না দিলে গাড়ি ছাড়া যাবে না। আর না দিলে মামলা করব। আমি বললাম নিহত সুমনের বাবা তো কোনো টাকা পয়সা দাবি করছে না। সেটা আপনার কাছে না করলেও আমার কাছে বলছে টাকা নিবে।
তিনি অভিযোগ করেন, দীর্ঘ একমাস চেয়ারম্যানের পেছনে ঘুরে ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে আমি এক লাখ টাকা চেয়ারম্যানের ম্যানেজার এমএ হোসেনের হাতে দিলে আমার গাড়িটি ছাড়ে। কিছুদিন আগে আমি শুনতে পারলাম এ টাকা চেয়ারম্যান নিহতের কাউকে প্রদান করেননি। তিনি নিজেই সব টাকা খেয়ে ফেলেছেন।
সোনা মিয়া বলেন, আমি গরিব মানুষ। আজ সে ঋণের টাকা পরিশোধ করতে পারিনি। আমি মনে মনে ভাবছিলাম চেয়ারম্যান আমার টাকাগুলো অন্যায়ভাবে নিয়ে যাচ্ছে। তাই মোবাইলে ভিডিও করে রেখেছিলাম।
চেয়ারম্যানের ম্যানেজারের নিকট টাকা বুঝিয়ে দেন ট্রাক্টর চালক সোনা মিয়ার ভাতিজা মানিক। তিনি বলেন, চেয়ারম্যানের কথা অনুযায়ী তার মাধবদী ফ্যাক্টরিতে গিয়ে ম্যানেজারের নিকট টাকা বুঝিয়ে দিয়ে আসি। ওই সময় আমার সঙ্গের একজনকে দিয়ে লেনদেনের টাকা ভিডিও করে রেখেছি।
এদিকে নিহতের বাবা বেনু মিয়া বলেন, আমি চেয়ারম্যানকে কোনো দিন বলিনি গাড়ির মালিকের কাছ থেকে টাকা এনে দেন। আমি গাড়ির মালিককে বলছি, গাড়ি নিয়ে যেতে। কিন্তু চেয়ারম্যান র্দীঘদিন দেরি করে গাড়ি দিয়েছে। কত টাকা নিছে সেটা আমিও জানি না। আপনাদের কাছে শুনলাম এক লাখ টাকা নিয়েছে।
এ প্রসঙ্গে অভিযুক্ত ইউপি চেয়ারম্যান ও পাইকারচর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি আবুল হাসেমের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমার নিজস্ব ব্যবসা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। আমার ম্যানেজার বিভিন্ন টাকা লেনদেন করে। এটাকে ক্ষতিপূরণের বলে চালিয়ে দিলে তো হবে না। দুর্ঘটনার পর সমবেদনা জানানোর জন্য আমি নিহতের বাড়িতে গিয়েছি। সেখানে কোনো দফা রফা হয়নি।